দাইয়ুস আবার কে..? আমি দাইয়ুস কেমন করে হলাম, তোমার এতো বড় সাহস আমাকে দাইয়ুস বলো..?
দাইয়ুস তাকে বলা হয়, যে নিজের স্ত্রীকে কিংবা তার দায়িত্বশীল পরিবারের মেয়েদের পর পুরুষকে দেখিয়ে আনন্দ পায় কিংবা পর পুরুষের সামনে যেতে কোন ধরনের বাধা দেয় না সেই ব্যক্তি দাইয়ুস।
আর দাইয়ুস ব্যক্তি জান্নাতে তো যাবে না; জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হচ্ছে দাইয়ুস ব্যক্তি; যাদের দিকে আল্লাহ তাকিয়েও দেখবেন না। [মুসনাদে আহমাদ]
আজকে ইউটিউবে দেখলাম দুটি বুড়িকে নাচতে দেড়লাখ ভিউ, আড়াই হাজার লাইক। সিলেটি গান আইলারে নয়া দামান ভাইরাল হবার পর থেকেই অনেকেই অনেক রকম করেই গানটি পরিবেশন করছেন নিজেকে ভাইরাল করার জন্য আহা--- কি মজা ভাইরাল হওয়াটা তাইনা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। আমার কিন্তু ভয়ে শিউরে উঠছে কেন জানেন...? আসুন বলছি।
যারা ভাইরাল হবার জন্য, কিছু লাইক পাবার জন্য, কিছু ফলোয়ার বা কিছু সাবসক্রাইবার পাবার জন্য আকুল হৃদয়ে ব্যাকুল হয়ে এই সকল কাজ করছেন তারাওতো কারো সন্তান, ভাই,বোন,স্ত্রী,মা, বাবা তাই নয় কি....? সামাজিক সম্পর্কের বাইরে তো কেউ নয়। অমুসলিম হলে কিছু বলার নেই কিন্তু মুসলিম হলে আপনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা সহজ মনে হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব অত্যান্ত ভয়ংকর। ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেসবুকে আমাদের বোনেদের নিজের ছবি আপলোডের হিড়িক দেখলে তাই মাঝে মাঝে আঁতকে উঠি। কি ভয়ংকর ফিতনার দরজাই না বর্তমান সমাজের মেয়েরা খুলে দিচ্ছে অনায়াসেই।
আমাদের সভ্যমেয়েদেরকে দাজ্জালের অনুশারিরা আজ ঘরের ভিতরে রেখেই সকলের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বিভিন্ন ঘরোয়া ব্লগ ইউটিউবে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে সকালে বিছানা ছেড়ে উঠবে তার পর চা খাবে তারপর যা করার সবই করে দেখাচ্ছে এমনকি বাজারে যাচ্ছে কি রান্না করছে সব। কত ভিউ হলো কত সাবস্ক্রাইবার হলো এই নিয়েই তাদের দিন শুরু হয়। বিধর্মিদের দেখা দেখি মুসলিমরাও এগুলো শুরু করে দিয়েছে।
আমরা যদি কুরআনে নারী পুরুষের জন্য পর্দার আয়াতগুলো খেয়াল করি তাহলে দেখব আল্লাহ মুমিন মুমিনাদের প্রথমেই বলেছেন দৃষ্টি অবনত করতে। “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে……” [সূরা নুরঃ ৩০] “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে…..” [সূরা নুরঃ ৩১]
কেননা সমস্ত জিনার শুরু হয় দৃষ্টি থেকে। যে নিজের চোখের হেফাজত করতে পারে তার জন্য অশ্লীলতা, জিনার মত ব্যাপারগুলো থেকে হেফাজতে থাকার কাজটা সহজ হয়ে যায়। আর সেখানে আমাদের বোনেরা যদি সেই চোখকেই পুরুষের লুলুপ দৃষ্টির জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে ফিতনার চূড়ান্ত ভয়াবহতার দিকেই তা রুপ নিবে।
অথচ ফেসবুক, ইউটিউব,টিকটক এই জাতিয় সকল মাধ্যম গুলোতে এর বিপরিত অবস্থা দেখা যায় তাহলে অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। আপনি আমি নিজের জ্ঞানের সল্পতার কারনে নিজের অজান্তেই দাইয়ূসে পরিনত হচ্ছি।
এই বিষয়গুলোতে আমাদের অভিভাবকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। ইসলামি ফ্যামিলি হলেও মেয়ে ফেসবুকে কি করছে, যা করছে তা ইসলাম সমর্থন করে কিনা তার খবরাখবর রাখা, ভুল কিছু করলে তা শুধরে দেওয়া, ইসলামের রুলিং জানানো অভিভাবকদের দায়িত্ব। আশা করি এই দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়ে কেউ দাইয়ুস হয়ে জাহান্নামের বাসিন্দা হতে চাইবেন না আর আমাদের হিজাবি মেয়েরাও ফিতনার দরোজা উন্মুক্ত করে শয়তানকে সুযোগ দিতে চাইবেন না ইনশাআল্লাহ। কারন ফেসবুকে সকলেই ফ্রেন্ডস হয়না ফলোয়ারো থাকে।
ইসলামের বিধান অনুযায়ি বেশ কিছু কারণে মেয়েদের ফেসবুকে, চ্যাট রুমে কিংবা অন্য কোন ওয়েবসাইটে নিজেদের ছবি দেওয়া হারামঃ
প্রথমত ইন্টারনেটে ছবি আপলোডের ব্যাপারটা কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে আল্লাহ আয ওয়া যাল মহিলাদের পর্দার মাধ্যমে শরীর ঢেকে রাখার এবং গোপন করার যে বিধান দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে যায়। কেননা আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তায়ালা নবী পত্নীদের সাথে পর্দার বিষয় আলোকপাত করতে গিয়ে সূরা আহযাবে বলেন,
“তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ”। [সূরা আহযাবঃ ৫৩]
“ হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। [সূরা আহযাবঃ ৫৯]
এছাড়া আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে পুরুষের সামনে কোমল স্বরে কথা বলতেও নিষেধ করেছেন,
“হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে”। [সূরা আহযাবঃ ৩২]
তাই আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তায়ালা নবী পত্নীদের এবং সাথে সকল বিশ্বাসী মুসলিমাদের জন্য পর্দার যে বিধান নির্ধারণ করেছেন সেটা মেনে চলা উচিত যাতে তারা ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকতে পারেন, নিজেদের সতীত্ব রক্ষা করে চলতে পারেন এবং মানুষের মনে যেন বক্রতার দরুন অহেতুক সন্দেহের সৃষ্টি না হয়।একবার যদি আমরা এটা বুঝতে সক্ষম হই তাহলে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা যে, একজন মহিলা যদি তার ছবি বা ভিডিও আপলোড করে যা একইসাথে সৎকর্মশীল এবং বক্রহৃদয়ের নীতিহীন মানুষগুলোর কাছে উন্মুক্ত তাহলে এধরনের ওয়েবসাইটে নিজেদের শো করাটা আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ!
দ্বিতীয়ত এটা ছবির মহিলা এবং ছবির দর্শক উভয়ের জন্য ফিতনাস্বরূপ। এই ফিতনার ফলশ্রুতিস্বরূপ অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা আমরা শুনেছি এবং পড়েছি। অনেক নিষ্পাপ এবং সচ্চরিত্রের মেয়েই এভাবে আল্লাহকে ভয় না করা শয়তানদের মিষ্টি কথা এবং প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়ে নিজেদের দ্বীন, আত্মসম্মান সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন। নিজেদের ফায়দা হাসিল করে তারা এসব মেয়েদের জন্য দুনিয়া আর আখিরাতে লজ্জা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট রাখেনি।
অনেক নীতিহীন আল্লাহর দুশমন মেয়েদের এসব ছবিকে আধুনিক উপায়ে বিকৃত করেছে, কোন মেয়ের মাথা ব্যভিচারি মহিলার শরীরের সাথে লাগিয়ে কুৎসা রটিয়েছে আবার ফেসবুক থেকে সংগৃৃহীত ছবি দিয়ে যাদু বা বান মারার মতো জঘন্য কাজ করছে যা মেয়েটির জীবন এবং পরিবারের জন্য মারাত্মক অনুতাপের কারণ হয়েছে আর এই অসম্মান আর অনুতাপ মেয়েটি নিজেই ডেকে এনেছি নিজের ছবি মানুষের কাছে সহজলভ্য করে।
তৃতীয়ত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি প্রপার হিজাব মেনে চলা হয় এবং চেহারা ঢেকে রাখা হয় তখন বিশেষ করে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তা বৈধতা পায়। তবে একজন সচেতন মুসলিমাহ মানেই এটা বুঝতে পারার কথা এই ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেসবুকে নিজেদের ছবি আপলোড করার মাঝে কোন জরুরাত কিংবা বেনেফিশিয়াল কিছু নেই। যা আছে তা হল ফিতনা এবং নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা। এমনকি আমরা যদি বলিও যে মহিলাদের মুখ ঢেকে রাখাটা বাধ্যতামূলক নয় তারপরও কোন মুসলিমাহ তার ছবি নেটে ছেড়ে শয়তানের রাস্তায় যে ফিতনার অবতারণা হয় সেটাই যথেষ্ট এটাকে অবৈধ করতে। এক্ষেত্রে পাপের মাত্রাটা মাল্টিপ্লাই হতে থাকে এবং বিপদের আশংকাও বাড়তে থাকে।আর এর মাধ্যমে মুসলিমদের ইতিহাসে বিশ্বাসী মহিলারা আল্লাহর বিধান পালনের যে ধারা অনুসরণ করে এসেছে তার সীমালংঘন করা হয়।
আশা করি সকলেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণের আগে আল্লাহকে ভয় করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফজত করুন। আল্লাহ আমাদের বোনেদের পরপুরুষের লুলুপ দৃষ্টি কিংবা ফেসবুকের লাইক কমেন্টের মাধ্যমে নয় ইসলামের মাধ্যমেই সম্মানিত হওয়ার তৌফিক দান করুন, আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করা তৌফিক দান করুন আমীন।।