যিনি রুকইয়াহ করেন, তাকে রাক্বী বলা হয়। রাকি হওয়ার প্রথম শর্ত হলো পুর্ণ তাকওয়াবান হতে হবে। সকল প্রকার গোনাহ বিশেষ করে কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। শতভাগ হালাল উপার্জন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলা যাবেনা। উধাহরন সরুপ: আপনি মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন এখনো হননি কেউ ফোন দিয়ে বললো কি এখন কোথায় আপনি বললেন এইতো মসজিদ থেক বাড়ির দিকে যাচ্ছি, এটাই মিথ্যা বলে গন্য হবে কারন আপনি তখনো বেড় হননি। আপনাকে বলতে হতো মসজিদে আছি বের হতে চাচ্ছি। আশা করি কি বোঝাতে চাচ্ছি সেটা বুঝতে পেরেছেন।
নিজের জন্য রুকইয়াহ নিজেই করার প্রয়োজন অপরিসীম। যেকোন সমস্যা শুরুর আগেই যদি এর সমাধান জানা থাকে, তাহলে এটা বেশিদূর গড়ায় না। তাই আমি যদি জানি কোন সমস্যায় সেলফ রুকইয়ার নিয়ম কি, তাহলে আমার ছোটখাটো সমস্যা অনেক বড় হবে না। এছাড়াও কিছু বোনাস রয়েছে।
১. দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ
জ্বিন যাদু ইত্যাদি সমস্যাগুলো নিয়ে যারা আসে, তাদের অনেকেই থাকে এমন, যারা দ্বীন পালনের ব্যাপারে উদাসীন, রুকইয়াহ করার সময় তাদেরকে দাওয়াত পৌঁছানোর সুযোগ পাওয়া যায়। আর এদের বিরাট একাংশ হয় এমন, যারা সুস্থতা লাভের লাভের আশায় কবিরাজ-বৈদ্যদের কাছে ঘুরে ঘুরে ইতিমধ্যে কুফরি বা শিরকি কাজ করে ফেলেছে। তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের বার্তা পৌঁছানোর সুযোগ হয়।
২. কোরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি।
যিনি রুকইয়াহ করেন, প্রতিদিন তাকে দীর্ঘক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করতে হয়। এতে কোরআনের সাথে সম্পর্ক দিনদিন বৃদ্ধি পায়। এর সাথে কোরআন পাঠের বিবিধ ফযিলত তো আছেই। যেমনঃ কোরআন তিলাওয়াতের প্রতিটি হরফে সওয়াব! আপনি যদি প্রতিদিন এক ঘন্টাও রুকইয়াহ করেন, এই একঘণ্টায় আপনার ঝুলিতে অনেকগুলো সওয়াব জমে যাবে।
এছাড়া রাসুল ﷺ বলেছেন, “তোমরা কুরআন পাঠ কর। কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ কারী হবে।” (মুসলিম ১৩৩৭)
৩. মুসলিম ভাই-বোনদের বিপদে সহায়তা করা।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক সময় ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে আমর ইবনু হাযমের বংশের লোকেরা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের নিকট একটি রুকইয়াহ ছিল, যা দিয়ে আমরা বিচ্ছুর ছোবলে ঝাড়ফুঁক করতাম, এখন আপনি তো ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারা সেটা রাসুল ﷺ এর নিকট উপস্থাপন করল। তখন তিনি বললেন, কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কোনও উপকার করতে সমর্থ হয়, তাহলে সে যেন তা করে। (সহিহ মুসলিম ৪০৭৮)
আর একজন মুসলিম ভাইকে সাহায্য করার অনেক অনেক লাভ আছে। যেমন: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন মুমিনের কোন বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৮৬৭)
এই হাদিসে আমরা দেখলাম রুকইয়ার মাধ্যমে যে মানুষের উপকার করা যায়, এটা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
৪. কুফরের বিরুদ্ধে এবং তাওহিদের পক্ষে সংগ্রাম করা।
ইবনে তাইমিয়া রহ. এজন্য মুখলিস রাক্বিদের ব্যাপারে বলেছেন: রাক্বির উচিত গুনাহ থেকে দূরে থাকা, যেন এই সুযোগে জ্বিন তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। সে তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারির ন্যায়। আর রুকইয়াহ করাও জিহাদের একটি উত্তম পদ্ধতি। তাই তাঁর সতর্ক থাকা উচিত, যেন গুনাহ তাঁর শত্রুকে বিজয়ী হতে সহায়তা না করে।” (মাজমুউল ফাতওয়া ১৯/৫৩, রিসালাতুল জ্বিন ৬৫পৃ)
হক্বের ব্যাপারে অনড় একজন রাক্বি সমাজ থেকে কুফর-শিরক দূর করার জন্য নিজের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলে মেহনত করেন, আর যখন কুফরি যাদু আক্রান্ত কারো চিকিৎসা করে অথবা শয়তান ভর করা ব্যক্তির ওপর রুকইয়াহ করে, তখন সে আল্লাহর কালামের সাহায্যে সরাসরি শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে।