জ্বীনকে বন্দি করতে চান..? জ্বীনকে ডাকতে চান..? ভালো, ডাকার পরে যদি না যেতে চায় তখন কি করবেন। তাই জ্বীনকে বন্দির আগে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন। 


জ্বীনকে বন্দী ও কিছু প্রশ্ন



আসসালামু আলাইকুম
যারা জীনকে বন্দী করেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন করতে চাই যার উত্তর আমাকে কেউ কোন জীনের চিকিৎসক ইউটিউবে দেননি। আমরা জীনদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি সব কিছুই কিন্তু কোরআনের তাফসীর ও হাদিস থেকে। এর বাইরে কিছু ইহুদীদের কল্পকাহীনি রয়েছে যেগুলো বিশ্বাস না করাই ভালো কারন তাতে ঈমান দুর্বল হবার ভয় থাকে। একটি উধাহরন দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে যেমন: কোরআনে বলা হয়েছে প্রথমে আদম আঃ ও তার থেকে হাওয়া আঃ কে সৃষ্টির করা হয়েছে। কিন্তু ইহুদিরা বলছে হাওয়া আঃ এর আগে আরেকজনকে আদম আঃ এর স্ত্রী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিলো সে অবাধ্য ও সেচ্ছাচারিতা এবং আদমকে সম্মান না করার কারনে বেহেস্ত থেকে বিতারিত হয় এবং সেই পরবর্তিতে ইবলিসের স্ত্রী হয়েছিলো যার নাম লিলিথ এটা মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা কারন প্রথমত আদমের স্ত্রী অবস্যই মানুষ হবে তার সাথে ইবলিস যেকিনা একজন জ্বীন তার স্ত্রী হয় কেমন করে। দ্বিতীয়ত কোরআনে ইবলিসের স্ত্রীর কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না।

আমরা জানতে পারি জ্বীন জাতি হুবহু মানুষ জাতির মতই জীবন যাপন করে। তাদের হাত পা চোখ বিবেক বুদ্ধি সবই আছে। তাদের বিয়ে হয়, বাচ্চা হয়। তাদের পশু আছে। তার খাবার গ্রহন করে। তাদের ওখানে রাজ্য পরিচালনার প্রথা অর্থাৎ রাজা রানীর প্রথা চালু আছে। তাদের মধ্যে মানুষের মতই ধর্ম মেনে চলে তারাও মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা হাম্বলী মালেকি শাফেঈ ইত্যাদী সকল মাজহাব বিভক্ত রয়েছে। পৃথিবীর এমন কোন জায়গা নেই যেখানে জ্বীনদের বসতি নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে থাকার বিষয়ে জ্বীনেরা যখন অভিযোগ দিয়েছিলো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম মুসলিম জ্বীনকে ফাঁকা জায়গায় যেখানে মানুষের আবাদ নেই, দুই পাহাড়ের মাঝখানের উপত্যকায় নির্জন দ্বীপে থাকতে বলেছেন আর অমুসলিমদের বনে জঙ্গলে ও বিভিন্ন পাহাড়ের গর্তে ফাঁক ফোকরে থাকতে বলেছেন তাতে তারা রাজি হয়েছিল। যা আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি। আরো একটা মজার বিষয় হচ্ছে জ¦ীনদের দশটি সন্তান হওয়ার পরেই আদমের একটি সন্তান জন্ম লাভ করে। তার মানে সংখ্যার দিক দিয়ে জ্বীনদের সংখ্যা বেশি।

জ্বীনদের গায়ের জোর অনেক বেশি যার ফলে কোন পেন্সিল বডি টাইপ মেয়ে বা ছেলের উপর জ্বীন ভর বা আসর করলে তার সাথে বলিষ্ঠ চার জন পুরুষও পেরে উঠেনা। উধাহরন সরুপ রানি বিলকিসের সিংহাসনকে সোলাইমান আঃ যখন আনতে বললো তখন ইফরিদ বলেছিলো আপনি চখের পলক ফেলার আগেই আমি এনে দিবো।

আবার তারা যে কোন বস্তু ধরতে পারে তার প্রমান পাওয়া যায় আবু হোরাইরার যাকাতের মাল চুরির ঘটনা থেকেই জানা যায়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম জ¦ীনদের সাথে কথা বলেতেন। জ্বীনরা তাঁর কাছে বিচার দিতো ইসলাম শিক্ষা করতো। তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের কোন সমস্যা হলে জ্বীনদের কাছে কেন সাহায্য নিতেন না তার কাছে তো এটা সহজ ছিলো। শত্রুরা কি পরিকল্পনা করছে সেটা জেনে নিয়েও শত্রুকে পরাজিত করতে পারতেন অথবা যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহ জ্বীনদের বাদ দিয়ে কেন ফেরেস্তা দিয়ে সাহায্য করলেন। আবার যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে যাদু করা হয়েছিলো তখন জীবরাঈল আঃ এর মাধ্যমে ওহী দিয়ে জানানো হয়েছিলো অথচ কোন জ্বীন এসে তাকে এই খবর দেয়নি।

তাহলে যেখানে সুন্নাতের মধ্যে পাওয়া যায়না জ্বীনদের সাহায্য নেয়া। জ্বীনদের কাছ থেকে কোন তথ্য নিয়ে তার উপরে আমল করা বা তাদের কথা বিশ্বাস করা। তাহলে আমরা সেটা কেন করতে যাবো। ইউটিউবে যতরকম ভন্ডামী বলবো না নিজের ব্যাবসা বলবো করার জন্য কতরকম কথা শুনতে ও কাজ দেখতে পাওয়া যায় তা রিতিমত হাস্যকর।

এখন আসি মূল প্রসঙ্গে যার জন্য এতো কথার অবতারনা করতে হলো।

 আমার প্রশ্ন হচ্ছে

১. যারা জ্বীনকে বোতলে বন্দি করছেন আপনারা কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর চাইতেও বড় মাপের আলেম হয়ে গেছেন.? নাউজুবিল্লাহ। যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম শয়তানকে ধরার পরেও এমন ভাবে ধরেছিলেন যে শয়তানের জীহবার স্পর্সের অনুভুতি উপলব্ধি করেছিলেন অথচ তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন..? প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন মসজিদের খুটির সাথে  শয়তানকে বেধে রাখবেন সকালে বাচ্চারা তাকে নিয়ে খেলবে কিন্তু যখনি সোলাইমান আঃ এর দোয়ার কথা তার মনে পড়লো অমনি তিনি শয়তানকে ছেড়ে দিলেন। সোলাইমান আঃ দোয়া করেছিলেন আমার মত রাজত্ব্য আর কাউকে যেন না দেয়া হয় এই কারনে। সোলাইমান আঃ এর কাছে সকল জ্বীন অনুগত ছিলো এমনভাবে যে সোলাইমান আঃ এর চোখের দিকে কোন জ্বীন তাকিয়ে কথা বলতো না চোখে চোখ পড়লেই সেই জ্বীন পুরে মারা যেত।

২. জ্বীনরা খাবার খায় তাহলে আপনি যে তাকে বোতলে বন্দি করলেন তার খাবারের কি ব্যাবস্থা হবে..?

৩. জ্বীনরা সংসারি হয় তাদেরও আত্বিও স্বজন আছে আপনি যে তাকে বোতল বন্দি করলেন তাহলে যৌন চাহিদার কি ব্যাবস্থা হবে..?

৪. জ্বীনদের সন্তান হয় আপনি যাকে বন্দি করলেন সেতো কারো সন্তান, ভাই, স্বামী বা বাবা ইত্যাদি কোন না কোন সম্পর্কের সেই সম্পর্কের কি হবে..? যেমন কোন বাবা বন্দি হলো তাহলে তার স্ত্রী সন্তানরা কিন করবে..?

৫. জ্বীনরা কোন বস্তু ধরতে ছুঁেত পারে তাহলে আপনার বোতলের ঢাকনা সে কেন খুলতে পারেনা বা বোতলটিকেই কেন নিয়ে নষ্ট করেনা.?

৬. তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম আপনার বন্দি করাই ঠিক কোন সমস্যা নেই তাহলে আপনি আল্লাহর একটি সৃষ্টিকে যে বন্দি করলেন, ক্ষুধার কষ্ট দিচ্ছেন অন্যান্য কষ্ট দিচ্ছেন সে তখন আপনাকে অভিশাপ দিবে কারন সে মাজুর আর মাজুরের দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন আর সে বন্দি অবস্থায় তো মুসলিম হতে পারে তখনতো তার দোয়া আরো বেশি কবুল হবে সেই অভিশাপ আটকানোর জন্য আপনি কোন উপায় অবলম্বন করেছেন কি..?

৭. যাকে দেখা যায়না অনুভব করা যায়না তাকে বন্দি করার সময়ে এমন ভাব দেখানো হচ্ছে যে যিনি বন্দি করছেন সে নিজের চক্ষে দেখতে পাচ্ছেন এটা কোন ধরনের প্রতারণা আল্লাহতো বলেই দিয়েছেন তোমরা তাদেরকে (জ¦ীনকে) দেখতে পাওনা কিন্তু তারা তোমাদের দেখে। এটা যদি প্রতারনা না হয় তাহলে অবস্যই আপনার কানে কানে কোন জ্বীন বলে দেয় আর সেটাই যদি সত্যি হয় তাহলে আপনি একজন কাহেন (যারা জ্বীনদের দারা কাজ করায়) বাহ্যিকভাবে দেখতে আপনি যত বড় মাপের আলেমই হননা কেন।

৮. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যখন সত্যায়িত করেই দিয়েছেন যে জ্বীনরা মিথ্যুক তাহলে কেউ একজন এসে যখন বলছে আমি মুসলিম। আমার বয়স দশ হাজার বছর। এই মেয়ের উপরে তার শাশুড়ী যাদু করছে এইরকম কথা যখন বলে সেটা কিভাবে বিশ্বাস করছেন..? তারাতো সবসময়ের জন্য চায় যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যেন কোন্দল লাগে আর তা যেন তালাকে পরিনত হয়। কোন যুক্তি তাদের কথা গুলো বিশ্বাস করা যায় যেখানে মুসলিম দাবীদার একজন জ্বীন সঠিকভাবে সালামের উত্তর দিতে পারেনা।

৯. এমনটি যদি চলতে থাকে তাহলে সেই দিন খুব দুরে নয় যখন দেখা যাবে কোন এক জ্বীন এসে বলবে আমি সাহাবী জ্বীন, আমি ওমরের রাঃ জ্বীন, আমি ইমাম হাম্বল, মালেক, শাফেঈ রহঃ জ্বীন আমি বলছি কি করতে হবে। আমাদের হুজুর নির্ভর জনগন তখন সেটাই বিশ্বাস করবে আমল করবে আর নিজের ঈমানকে হারিয়ে বেঈমান হবে। কারন শয়তানের লক্ষ্য একটাই মানুষকে বেঈমান করে জাহান্নামে তার সঙ্গির সংখ্যা বাড়ানো। 





আল্লাহ আমাদেরকে দাজ্জালের অদৃশ্য সৈন্যের হাত থেকে রক্ষা করুন আমিন।