সিহর হলো এমন একটি কাজ যার মাধ্যমে কেউ শয়তানের কাছাকাছি চলে যায়। না হলে কক্ষনই জাদুকরের পক্ষে এগুলো করা সম্ভব হতোনা। জাদু নিশিদ্ধ হবার পেছনে একটাই কারন আর সেটা হচ্ছে আল্লাহর ইচ্চার বিরুদ্ধে যাওয়া। যেমন উধাহরনের জন্য বলছি: আল্লাহ চাননা ওমুক মেয়ের সাথে আপনার বিয়ে হক। কিন্তু আপনি তার রুপে মুগ্ধ হয়ে চলে গেলেন তাবিজ কিনতে যার মাধ্যমে সেই মেয়ে আপনার কাছে আসলো ঠিকই কিন্তু যাদুর রেশ কাটা মাত্র সংসারে অশান্তি আর শেষমেষ তালাক পর্যন্ত পৌছায় যা শয়তানের সবচাইতে পছন্দনীয় কাজ। কারন তালাক হলে দুই পরিবারের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, সম্পর্ক নষ্ট হয় আর সন্তানরা হতাশায় ডুবে যায়। যা আল্লাহর আদেশের বিপরিত। আল্লাহ বলেছেন সম্পর্ক দৃড় করতে হতাশাগ্রস্ত না হতে অথচ এই তালাকের মাধ্যমে সুদুর প্রশারি ফল লাভ হয়।
জাদুর অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে। সাধারনত যাদুকর কোনো ব্যক্তিকে কুফুরি বাক্য বা মন্ত্র দ্বারা, অথবা কোন শয়তান বা যাদুকরজীন দ্বারা, স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে মানুষকে অসুস্থ করে রেখে, ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটায় এবং কোনো মেয়ে বা ছেলের বিয়ে না হওয়া, আটকে রাখা, ইত্যাদি বিষয়ের জন্য যে যাদু ক্রিয়া ঘটানো হয়, সাধারণত একে আমরা কালো যাদু বা বাণমারা বলে বুঝি। এগুলো মুশরিক ও জাহেলি যুগের লোকদের মাঝে প্রাচীনকাল থেকেই এর বহুল প্রচলন ছিল মুসা আঃ ও সোলাইমান আঃ এর যুগে এর ব্যপক প্রশার লাভ হয় বিশেষ করে সোলায়মান আঃ এর মৃত্যুর পর শয়তান জ্বিনেরা এটি বিস্তার করতে মানুষকে সাহায্য করেছিলো। যার রেশ এখনো রয়েছে। ইসলামি শরিয়তে এগুলো হারাম বা নিষিদ্ধ।
জাদুবিদ্যা অর্জনের জন্য গ্রহ-নক্ষত্র, জিন-শয়তানের সহায়তা লাভ করতে কুফরি, শিরকি ও পাপাচারকে অবলম্বন করা হয়। যার মাধ্যমে অদৃশ্যভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করা হয়। এর বিস্তারিত বর্ননা করা উদ্দেশ্য নয়। এর জন্য একটি পুর্নাঙ্গ বই আছে। জাদুর বাস্তবতা সম্পর্কে কিছু আয়াত উল্লেখ করলেই এর প্রমান পাওয়া যায়।
যেমন আল্লাহ বলেন:
এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রাসূল এসেছেন তারাই তাকে বলেছে, এ তো এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ!: সূরা ৫১ আয-যারিয়াত আয়াত: ৫২
যদি তাদের জন্য আমি আকাশের কোন দুয়ার খুলে দিই এবং তারা তাতে চড়তেও থাকে। তবুও তারা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটানো হয়েছে; বরং আমরা এক যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়। সূরা আল- হিজর আয়াত: ১৫
যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। সূরা ৭ আল আ’রাফ আয়াত:১১২
তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলোকে বাধিয়ে দিল, ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে। সূরা ৭ আল আ’রাফ আয়াত:১১৫-১১৭
তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্ববিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত। সূরা ২ আল বাকারা আয়াত:১০২
জাদুবিদ্যাকে হালাল মনে করার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কেননা গণক, জ্যোতিষ বা জাদুবিদ্যা পারদর্শীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর হুশিয়ারি ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি গণক, জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চায়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হয় না (নাউজু বিল্লাহ)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘জ্যোতিষী হলো গণক; আর গণক হলো জাদুকর। হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের শরিয়তে জাদু নিঃশর্তভাবে কুফরি তথা নিষিদ্ধ ছিল।
বর্তমান সময়ে আমরা বিভিন্ন পত্রিকায় দেখে থাকি রাশিফল যেখানে বিভিন্ন গনকের লেখা আসে। তারা বলে এই তারিখে জন্ম নিলে তোমার রাশিফল এই। তােমার জন্য সফর বিবাহ ব্যবসা ইত্যাদি শুভ বা অশুভ। ইত্যাদি সব অনুধ্যঅন এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র। জ্যোতিষ শাস্ত্র এক প্রকার জাদু এবং ভবিষ্যদ্বানী।
সম্মহিত করা একপ্রকার জাদু। অনুগত জীনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় রোগী সত্য মিথ্যার পার্থক্য করতে পারেনা। তখন ঐ ব্যক্তি যাদুকরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তার আপন বুদ্ধিমত্তা হারিয়ে ফেলে। তখন যাদুকরের দ্বারা সম্ভব যা চায় তাই করতে পারে। আবার যেকোন ধরনের বস্তুর মাধ্যমে যেমন: খাদ্যদ্রব্য, তেল, পানি নিত্যব্যবহার্য কাপড়, ঘড়ি বেল্ট জুতা ইত্যাদিও তারা যাদু হিসেবে ব্যবহার করে।
যাদুর লক্ষন
যাদুর বিভিন্ন প্রকার ও ধরন রয়েছে। যাদু দ্বারা যাদুকৃত ব্যক্তির অন্তর, বিবেক ও ইচ্ছার মধ্যে প্রভাব পরে। যাদুর মাধ্যমে হত্যা করা,অসুস্থ করে রাখা, সহবাস থেকে বিরত রাখা, স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা,এবং ভালোবাসা সৃষ্টি সহ ইত্যাদি হারাম কাজ করা হয়।
**বিচ্ছেদ ঘটানো যাদু: আমাদের সমাজে এমন মানুষ ও আছে যারা কারো সুখ-স্বাচ্ছন্দ,উন্নতি সহ্য করতে পারেনা। তারা হিংসা ও বিদ্বেষ বশত দু ব্যক্তির মাঝে যাদু করে বিচ্ছেদ ঘটায়। এ প্রকারের যাদু কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমন- পিতা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ। মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ। দু ভাই বা বোনের মাঝে বিচ্ছেদ। বন্ধু ব্যাবসায়িক পার্টনার ও স্বজনদের মাঝে বিচ্ছেদ। স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ। শেষোক্ত প্রকারটি আমাদের সমাজে অধিক প্রচলিত,এবং এটাই এখনকার আমাদের আলোচ্য বিষয়।
**এই যাদু যেভাবে করা হয় : নির্দিষ্ট ব্যক্তি যখন যাদুকরের কাছে গিয়ে বলে, অমুক দুই ব্যক্তির মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে; তখন যাদুকর বলে, তাহলে তাদের মায়ের নাম, তাদের ব্যবহৃত পোষাক,চুল ইত্যাদি নিয়ে আস। আর যদি এসব না পাওয়া যায়,তবে তাদের খাদ্যদ্রব্যে যাদুমন্ত্র পড়ে ফুঁক দেয় বা তাদের চলাচলের পথে যাদুকৃত পানি ঢেলে দেওয়া হয় যা অতিক্রম করা মাত্রই উক্ত ব্যক্তি যাদুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়। বা অভিনব অন্য কোন পন্থায় যাদু করা হয়। এই যাদুর লক্ষনসমুহ: যাদুগ্রস্তের নিকটে অপরজনের প্রত্যেক কর্মই অপছন্দ হওয়া। যেমন স্বামী বাড়ির বাইরে অধিক ভালো থাকে,ঘরে ঢুকলেই অন্তরে সংকীর্ণতাবোধ অনুভব করে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়া।হঠাৎ করে ভালোবাসা শত্রুতায় পরিনত হওয়া। উভয়ের মধ্যে বেশি বেশি সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া। কারো মাঝে ক্ষমা চাওয়ার মানষিকতা না থাকা। স্বামীর কাছে স্ত্রীর সৌন্দর্য অসুন্দরে পরিনত হওয়া। যদিও সে অত্যন্ত রূপসী হোক না কেন।আর স্ত্রীর কাছে স্বামীকে নিকৃষ্ট মনে হওয়া।
**বশ করা বা বাধ্য করার যাদু: কিছু কিছু নারী রয়েছে,যারা চায় আমার স্বামী শুধু আমি যা বলবো তাই শুনবে । আমার কথায় চলবে। এজন্য যা করা দরকার আমি তাই করবো। এজন্য সে, কোনো যাদুকরের সন্ধানে ছুটে যায় স্বামীকে যাদু করে বশ করার জন্য। তার চিন্তা শুধু একটিই, কিভাবে স্বামীর ভালোবাসা অধিক মাত্রায় আদায় করা যায়। অনেক সময় স্বামীর সম্পদের প্রতি স্ত্রী লোভাতুর হয়েও স্বামীকে যাদু করে থাকে। আবার অনেক সময় ছেলে মেয়েকে বা মেয়ে ছেলেকে বা এক জন আরেক জনকে তার বাধ্য করার জন্যও এমন যাদু করে থাকে।
**এই যেভাবে যাদু করা হয়: যার উপর যাদু করা হয় তার ব্যবহৃত জিনিস যেমন: জামা, গেঞ্জি, বা টুপি বা এজাতীয় কিছু এনে দেয়,যাতে স্বামীর শরীরের স্পর্শ বা ঘামের গন্ধ থাকে। এরপর যাদুকর তা থেকে সূতা বের করে শিরকি মন্ত্র পাঠ করে,তাতে ফুঁক দিয়ে গিরা লাগিয়ে দেয়।এবং ওই নারীকে বলে” এই সুতা গুলো কোথা ও পূতে রাখবেন। অথবা সে কোনো খাদ্যদ্রব্য বা পানীয়তে শিরকী মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিয়ে দেয়। এ যাদুর আরো একটি নিকৃষ্ট পদ্ধতি রয়েছে তা হল , মহিলাদের হায়েজের রক্ত দিয়ে যাদু করে।তারপর ঐ নারীকে বলা হয় স্বামীকে যে কোন উপায়ে খাইয়ে দিবে বা সুগন্ধির সাথে মিশিয়ে দিবে। কখনো হিতে বিপরীত হয়। যেমনঃ ঐ নারী যাদু করেছিল স্বামী যেন সব নারীকে ঘৃনা করে,শুধু তাকেই ভালোবাসে। এই প্রকার যাদুর লক্ষণ সমূহ: স্ত্রীকে দেখার জন্যে অস্থির হয়ে যাওয়া।·স্ত্রীর বশীভূত ও অনুগামী হয়ে যাওয়া।· সহবাস করার জন্য অধৈয্য হয়ে যাওয়া। · সর্বদা অস্থির অস্থির ভাব লেগে থাকা।· স্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে ক্ষেপে যাওয়া ইত্যাদি ।
**বিয়ে আটকে থাকা যাদু: জ্বীনের মাধ্যমে যাদুকর এই যাদু করে থাকে। ছেলে বা মেয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বস্তু এবং মেয়ের আর তার মায়ের নাম বা ছবি এই কাজে ব্যবহার করা হয়। এরপর যাদুকর নির্ধারিত জিনকে পাঠায়,তখন জীন সেই মেয়ের পিছু নেয়; এরপর সুযোগ খুঁজে তার মধ্যে প্রবেশ করার।জীন সবসময় মানুষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। সাধারণত যে অবস্থায় জীন মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে তা হলোঃ-· ভীত-সন্তস্ত্র অবস্থায়।· অতিমাত্রায় রাগান্বিত অবস্থায়।·অতিমাত্রায় যৌন স্পৃহার অবস্থায়।· অতি উদাসীন বা গাফলতির অবস্থায়। এক্ষেত্রে জীন দুটি পদ্ধতির যে কোনো একটি পদ্ধতি গ্রহণ করে-প্রথমতঃ সে মেয়ের মধ্যে প্রবেশ করে মেয়ের অন্তরে ঘৃনা সৃষ্টি করে। ফলে যে পাত্রই প্রস্তাব দেয় মেয়ে তাকে প্রত্যাখ্যান করে।দ্বিতীয়তঃ জিনটি মেয়ের মধ্যে কোন কারণে প্রবেশ করতে না পারলে সে ছেলের মধ্যে প্রবেশ করে। তার অন্তরে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে এবং পাত্রীর প্রতি ঘৃনা জন্ম নেয়। এবং পাত্রীর বিভিন্ন দোষ তার সামনে ফুটে উঠে। ফলে যে পাত্রই তাকে দেখতে আসে সে পাত্রই মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এই প্রবলেম মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়ে থাকে। এই যাদুর কিছু লক্ষণ : বিয়ের প্রস্তাব দাতাকে খুব খারাব মনে হওয়া।· ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি বোধ করা।·মাথায় সর্বদাই আজে-বাজে চিন্তা আসা।· পেটে ব্যথা অনুভব হওয়া।·এমন মাথা ব্যথা হওয়া যা ঔষধেও কাজ হয় না।
**পাগল করা যাদু : এই জাদুও জ্বীনের মাধ্যমে করা হয়: যেই জিনের উপর এই যাদুর কাজ অর্পিত হয়, যাদুকরের নির্দেশনা অনুযায়ী সেই জিন রোগীর মস্তিষ্কে অবস্থান করে,তার স্বরন শক্তি ও চালিকা শক্তির উপর এমন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে কন্ট্রোল করে, যা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানেনা। যার ফলে রোগী পাগলের অবস্থায় পরিনত হয়। পাগল করা যাদুর লক্ষণসমূহ: অস্থিরতা, দিশেহারা ও ভূল ভ্রান্তি বেশি হওয়া। কথা-বার্তায় ভারসাম্যহীনতা। চোখের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া এবং সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া। কোন এক কাজে বা স্থানে স্থির না থাকা। নিজে পরিপাটি থাকায় উদাসীনতা। অজানা পথে চলতে থাকা। আর কখনো কখনো নির্জন স্থানে শুয়ে পরে ও বসে পরে।
**অদৃশ্য আওয়াজ শোনা যাদু: যাদুকর কোন জিনকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়ে বলে যে, অমুক ব্যক্তিকে ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় ভীতিজনক কিছু দেখাও, অতঃপর সেই জীন ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর জন্তুর রূপধারন করে পেসেন্টকে ভয় দেখায়।আর কখনো জাগ্রত অবস্থায় ভীতিকর আওয়াজে তাকে ডাকে। কখনো সেই কন্ঠ পরিচিত মনে হয়,কখনো বা অপরিচিত। এই যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ কখনো পাগল হয়ে যায়। আবার কখনো ওয়াসওয়াসা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। যাদুর শক্তি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া কম বা বেশি হয়ে থাকে। এই যাদুর লক্ষণসমূহ: জাগ্রত অবস্থায়: জাগ্রত অবস্থায় কোনো আওয়াজ শোনা অথচ কাউকে দেখতে না পাওয়া। নিকটাত্মীয় এবং বন্ধুদের সম্পর্কে অতিমাত্রায় সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া। ওয়াসওয়াসা বৃদ্ধি পাওয়া।ঘুমন্ত অবস্থায়ঃ ভীতিকর স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নে ভয়ঙ্কর জন্তু দেখতে পাওয়া যা তাকে তাড়া করছে। স্বপ্নে উঁচু স্থান থেকে নিচে পড়ে যেতে দেখা।
**ওয়াসওয়াসার যাদু: এই যাদুর লক্ষণসমূহ । একাকী থাকায় খুব পছন্দ করা ও সম্পুর্ন রূপে আলাদা থাকা। সর্বদাই চুপচাপ থাকা। কোন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে যাওয়াকে অপছন্দ করা। অস্বস্থি ভাব ও মেজাজ খিটখিটে থাকা। প্রায় সময়ই মাথায় ব্যথা থাকে।এই ধরনের যাদু যেভাবে করে- নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে যাদুকর নির্দিষ্ট জিনকে পাঠিয়ে দেয়। আর জিনকে একথা বলে দেয় যে, সে যেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মস্তিষ্ক তার আয়ত্তে নিয়ে আসে। এই যাদুর প্রভাব অনুযায়ী জীন শক্তিশালী হয়ে থাকে।
**রক্ত স্রাবের যাদু: যে নারীকে স্রাব প্রবাহিত করিয়ে যাদু করা হয়, যাদুকর সে নারীর শরীরে জীন প্রেরণ করে সেই জীন তখন তার রগে রগে চলতে থাকে । হাদীসঃ নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শয়তান আদম সন্তানের ভেতরে রক্ত প্রবাহের ন্যায় প্রবাহিত হয়।”জীন যখন নারীর জরায়ুর বিশেষ রগ পর্যন্ত পৌছে যায় তখন সেটাকে আঘাত করে;যার ফলে সেই রগ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামনা বিনতে জাহাশের ইস্তেহাজা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, “এটাতো রগের রক্ত, হায়েজ নয়”।
**বন্ধাত্বের জাদু : বন্ধাত্ব মূলত দুই প্রকারঃএক) সৃষ্টিগত ভাবে।দুই) যাদুর মাধ্যমে।প্রথম প্রকারটি তাকদিরের ফায়সালা। সেটার বিষয়ে আল্লাহ্ ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না। তবে দ্বিতীয়টির চিকিৎসা সম্ভব। এই যাদু যেভাবে করা হয় : বশকৃত জীন নারীর জরায়ুর ভেতরে প্রবেশ করে তার যেই ডিম্বাণু রয়েছে তা নষ্ট করে দেয়, যার ফলে আর বাচ্চা কনসেপ্ট হয় না। অথবা কখনো সে জীন ডিম্বাণুতে কিছু করে না যাতে করে জরায়ুতে বাচ্চা ধরে; কিন্তু গর্ভধারনের কিছু দিন পরে শয়তান তার জরায়ুর রগে আঘাত করে,যার ফলে স্রাব নির্গত হওয়া শুরু হয়, এবং গর্ভপাত হয়ে যায়। বারবার গর্ভপাত অধিকাংশ জিনের কারণে হয়ে থাকে। আর এজাতীয় অবস্থার বহু রোগীর কথা আমাদের জানা রয়েছে। হাদীসে আছে- নিশ্চয়ই শয়তান আদম সন্তানের মধ্যে রক্তের ন্যায় চলাচল করে। যাদু দ্বারা বন্ধাত্বের কিছু লক্ষণ : ঘুমের মধ্যে অস্থিরতা।·ভীতিজনক স্বপ্নে দেখা।· মানষিক অস্বস্তি অনুভব করা।·মেরুদণ্ডের নিচে ব্যথা করা।· মতিভ্রম হওয়া।
যাদুর চিকিৎসা
যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে: এখানে প্রাথমিক রুকিয়াহ উল্লেখ করা হলো
এক: যাদুকর কিভাবে যাদু করেছে সেটা আগে জানতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল নির্দিষ্ট কোন স্থানে অথবা চিরুনির মধ্যে অথবা অন্য কোন স্থানে রেখে দিয়েছে। যদি স্থানটি জানা যায় তাহলে সে জিনিসটি পুড়িয়ে ফেলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা বাতিল হয়ে যায়।
দুই: যদি যাদুকরকে শনাক্ত করা যায় তাহলে তাকে বাধ্য করতে হবে যেন সে যে যাদু করেছে সেটা নষ্ট করে ফেলে।
তিন: যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে: এর পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে। বিশেষতঃ যে দুআটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।”
জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন সেটাও পড়া যেতে পারে। সে দুআটি হচ্ছে- “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”
এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন।
যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে।
চার: সাতটি কাঁচা বরই পাতা সংগ্রহ করে পাতাগুলো গুড়া করবে। এরপর গুড়াগুলো পানিতে মিশিয়ে সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। তারপর সে পানি পানি করবে; আর কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে। যদি কোন পুরুষকে স্ত্রী-সহবাস থেকে অক্ষম করে রাখা হয় সেক্ষেত্রেও এ আমলটি উপকারী। সাতটি বরই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। তারপর সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। এরপর সে পানি পান করবে ও কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে।
যাদুগ্রস্ত রোগী ও স্ত্রী সহবাসে অক্ষম করে দেয়া ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বরই পাতার পানিতে যে আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:
১- সূরা ফাতিহা পড়া।
২- আয়াতুল কুরসি তথা সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত পড়া।
৩- সূরা আরাফের যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো সূরা আরাফ, আয়াত: ১০৬-১২২পড়া।
৪- সূরা ইউনুসের যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২পড়া।
৫- সূরা ত্বহা এর আয়াতগুলো সূরা ত্বহা, আয়াত: ৬৫-৬৯ পড়া।
৬- সূরা কাফিরুন পড়া।
৭- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ৩ বার করে পড়া।
৮- কিছু দোয়া দরুদ পড়া। যেমন-
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।” ৩ বার
“বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।” ৩ বার
পূর্বোক্ত আয়াত ও দোয়াগুলো যদি সরাসরি যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে পড়ে তার মাথা ও বুকে ফুঁক দেয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাময় হবে।