যেমন হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায়
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মন্ত্রপাঠ, তাবিজ/কবচ ও বশ করা শিরক। একথা শুনে (উনার স্ত্রী) যয়নব রা. বলেন: তুমি এ কি বলছ, আল্লাহর শপথ! আমার চোখে ব্যথা হলে আমি একজন ইয়াহূদীর কাছে যেতাম, সে মন্ত্র পাঠের পর আমার চোখে ফু দিলে ব্যথার উপশম হতো। তখন আবদুল্লাহ রা. বলেন, এতো শয়তানের অপকর্ম ছিল, সে নিজেই চোখে ব্যথা দিত, আর যখন ঐ ইয়াহূদী যখন তাতে ফু দিত, তখন সে বিরত থাকতো।
বদ নজরের প্রভাব সত্য। আল্লাহ বলেনঃ “কাফেরেরা তাদের দৃষ্টির মাধ্যমে আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিতে চায়।” (সূরা আল-কলমঃ ৫১)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “বদ নজরের প্রভাব সত্য। কোন জিনিষ যদি তাকদীরকে অতিক্রম করতে পারত, তাহলে বদ নজর তাকে অতিক্রম করত। তোমাদেরকে গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করবে এবং গোসলে ব্যবহৃত পানি দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করবে।” নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ্ শরীফে বর্ণিত আছে যে, একদা আমের ইবনে রাবীয়া সাহল ইবনে হুনাইফের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) তখন গোসল করতে ছিলেন। আমের ইবনে রাবীয়া সাহলকে দেখে বলল, আমি আজকের মত লুকায়িত সুন্দর চামড়া আর কখনো দেখিনি। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর সাহ্ল অসুস্থ হয়ে পড়ে গেল। তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে এসে বলা হল, সাহ্ল বদ নজরে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা কাকে সন্দেহ করছ? তারা বলল, আমের ইবনে রাবীয়াকে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেন তোমাদের কেউ তার ভাইকে হত্যা করতে চায়। কেউ যদি কারো মধ্যে ভাল কিছু দেখে, তাহলে সে যেন তার জন্য ভাই এর কল্যাণ কামনা করে এবং দু’আ করে। অতঃপর তিনি পানি আনতে বললেন এবং আমেরকে অযু করতে বললেন। অযুতে মুখমন্ডল, কনুই সহ উভয় হাত এবং হাটু পর্যন্ত এমনকি লুঙ্গীর নীচ পর্যন্ত ধৌত করে সাহলের শরীরে ঢালতে বললেন। কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় পানির পাত্র যেন পেছন থেকে ঢালে। এটি বাস্তব ঘটনা, যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
আল্লাহ মানুষের শরীরে এবং আত্মায় বিভিন্ন প্রকার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বদনজরের ব্যাপারটা মূলত আত্মিক। কোনো কিছুর প্রতি মুগ্ধতা অথবা হিংসা থেকে অন্তরের এটা সৃষ্টি হয়ে চোখের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে। এখানে চোখের শক্তি নেই। এজন্য অন্ধ ব্যাক্তির বদনজরও লাগতে পারে!!!
**বদনজর কখনো যোগাযোগের মাধ্যমে, কখনো সরাসরি দৃষ্টিপাতে, কখনো বদদোয়া বা তাবিজের মাধ্যমে, আবার কখনো ধ্যানের মাধ্যমেও হয়ে থাকে।
**কখনো মানুষের নিজের নজর নিজেকেই লাগে।
**নজর ইচ্ছাকৃত – অনিচ্ছাকৃত যেকোনোভাবে লাগতে পারে।
জিনের বদনজর মানুষকে লাগতে পারে, যেমন হাদিস থেকে জানতে পারি।
আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে দু’আ করার সময় প্রথমে জিনের বদনজর থেকে পানাহ চাইতেন, তারপর মানুষের নজর থেকে পানাহ চাইতেন। পরে সুরা নাস ফালাক নাযিল হওয়ার পর এই দুটি দিয়ে দুয়া করতেন।
উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. উনার ঘরে এক বালিকাকে দেখলেন যার চেহারায় বদনজরের আলামত ছিলো। রাসূল সা. বললেন- এর জন্য রুকয়া (ঝাড়ফুঁক) করো, একে জিনের বদনজর লেগেছে।
বদনজর কখনো রোগের কারণ হয়, আবার কখনো সরাসরি ক্ষতি করে। নজর লেগে কারো জ্বর চলে আসতে পারে, ডাইরিয়া হতে পারে (নজর লেগে পেট খারাপ হওয়া খুবই কমন ব্যাপার, গতমাসেও আমার এক রিলেটিভের হয়েছিলো) আবার নজর কখনো হৃদরোগের কারণও হতে পারে। আরো অনেক রোগ হতে পারে। ফসল কিংবা গাছের ফলও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ইত্যাদি ইত্যাদি