এক নজর

Advertisement

দোয়া তো মুমিনের হাতিয়ার

দোয়া তো মুমিনের হাতিয়ার


আসসালামু আলাইকুম। 

আপনি আগে কখনো চিঠি পোষ্ট করেছেন.? আমি করেছি। চিঠি পোষ্ট করার জন্য আমাদেরকে দুই টাকার একটি খাম কিনতে হোতো। এই চিঠি প্রাপকের কাছে দেড়িতে পৌছাতো কিন্তু জরুরি হলে আমরা তার উপর ১০ টাকার একটি টিকিট দিতাম এটা আরাে দ্রুত পৌছাতো আরো জরুরী হলে আমরা টেলিগ্রাম করতাম। 

আমাদের দােয়ার মধ্যেও যদি এই ভাবে একটু চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাই। এরকম টিকিট বা টেলিগ্রামের ব্যাবস্থাও রয়েছে। যেমন: যে দোয়ার মধ্যে দরুদ শরীফ বেঁধে দেয়া হয় সেই দোয়া বিনা বাধায় পৌছে যায় বা কবুল হয় আবার ইসমে আজম এর মাধ্যমে দোয়া করলে যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়। তাহলে বিষয়টা অনেকটা এমন নয় কি যে আল্লাহর কাছে কোন চিঠি পৌছানোর মত। এজন্য বলা হয় মুমিনের হাতিয়ারই হচ্ছে দোয়া। যা দিয়ে মুমিন যুদ্ধ করতে পারে। এখানে এমন কিছু হাতিয়ার উল্লেখ করলাম আশা করি কাজে লাগবে। 

দোয়া শব্দের অর্থ আল্লাহকে ডাকা, কিছু চাওয়া, প্রার্থনা করা অর্থাৎ বিনয়ের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রার্থনা করাই হল দোয়া। 

 আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হবে। (সুরা মু’মিন : আয়াত ৬০)

এই দোয়াকে আল্লাহ তাআলা ইবাদত হিসেবে অভিহীত করেছেন এবং সাহায্য লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন। কারণ দোয়া বা ইবাদাত ছাড়া মানুষের মুক্তির কোনো উপায় নেই।


আল্লাহর নিকট হেদায়েত লাভের দশটি গুরুত্বপূর্ণ দুআ


হাদিসে কুদসি: আবু যর আল গিফারি রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নিকট থেকে বর্ণনা করেন।

হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে হেদায়েত (সঠিক পথের সন্ধান) দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলে পথভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হেদায়েত চাও আমি তোমাদেরকে হেদায়েত দান করব।” (সহিহ মুসলিম)


নিম্নে কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে হেদায়েত প্রার্থনা এবং হেদায়েত পাওয়ার পর তার উপর অবিচল থাকা সংক্রান্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত দশটি দুআ উপস্থাপন করা হল:


দুআ: ১

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

“হে আল্লাহ, আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।” (সূরা ফাতিহা: ৬)


দুআ: ২

اللَّهُمَّ إِنِي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعفَافَ، والغنَى‎

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ’ফাফা ওয়াল গিনা।

অর্থ: “হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে সুপথ, আল্লাহ ভীতি,  চরিত্রের নির্মলতা ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি।


দুআ: ৩

اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي، وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী।

অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়েত দান করো এবং আমার নফসের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করো।”


দুআ: ৪

رَبِّ أَعِنِّي وَلاَ تُعِنْ عَلَىَّ وَانْصُرْنِي وَلاَ تَنْصُرْ عَلَىَّ وَامْكُرْ لِي وَلاَ تَمْكُرْ عَلَىَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي

উচ্চারণ:  রাব্বি আ’য়িননী ওয়ালা তু’য়িন আ’লাইয়া। ওয়ানসুরনি ওয়ালা তানসুর আ’লাইয়া। ওয়ামকুর লী ওয়ালা তামকুর আ’লাইয়া, ওয়াহদিনী ওয়া ইসসিরিল হুদা লী।


অর্থ: ‘‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করো না। আমার জন্য কৌশল এঁটো, আমার বিরুদ্ধে কৌশল এঁটো না। আমাকে হেদায়েত দান করো, আমার জন্য হেদায়েতের পথ সহজতর করো এবং যে ব্যক্তি আমার উপর অত্যাচার ও সীমা লঙ্ঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো। 


দুআ: ৫

‏ اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ‏‏ ‏

“হে আল্লাহ, জিবরিল, মিকাইল ও ইসরাফিলের প্রভু, আসমান-জমিনের মালিক, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সবকিছুর ব্যাপারে সম্যক অবগত, আপনার বান্দারা যে সব বিষয়ে মতবিরোধ করছে আপনি তাতে ফয়সালা করেন। হকের যি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যায় সে বিষয়ে  আপনার অনুমতিক্রমে আমাকে সঠিক পথ দেখান। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন।” (সহিহ মুসলিম)


দুআ: ৬

اَللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ وَسَدِّدْنِيْ – اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْهُدٰى وَالسَّدَادَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনী ওয়া সাদ্দিদনী, আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকাল হুদা ওয়াস সাদাদ।

অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়েত দান কর, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত কর। হে আল্লাহ! তোমার নিকট হেদায়েত ও সঠিক পথ কামনা করছি।”


দুআ: ৭

اللَّهُمَّ ثَبِّتْنى وَاجْعَلْهنى هَادِيًا مَهْدِيًّا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিতনি ওয়াজ’আলনী হাদিয়াম মাহদিয়া।

অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে স্থির রাখুন ও হিদায়েত কারী ও হিদায়েত প্রাপ্ত বানান ”


দুআ: ৮

اللهمَّ اهْدِني فيمن هديتَ, وعافِني فيمن عافيتَ, وتولَّني فيمن توليتَ, وبارِكْ لي فيما أعطيتَ, وقِنِي شرَّ ما قضيتَ, فإنك تقضي ولا يُقْضَى عليك, وإنَّهُ لا يَذِلُّ من واليتَ, ولا يَعِزُّ من عاديتَ, تباركتَ ربنا وتعاليتَ, لا مَنْجَا منك إلا إليكَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহদিনী ফী মান হাদাইত। ওয়া-ফিনী ফীমান আ’-ফাইত।ওয়া তাওয়াল্লানী ফী-মান তাওয়াল্লাইত।ওয়া বা-রিকলী ফী মা আত্বাইত। ওয়া ক্বিনী শাররা মা-ক্বায্বাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্বী অলা য্যুকয্বা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁউ ওয়া-লাইত। ওয়া লা য়্যাইয্‌যু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা ওয়া তাআ’লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক।

অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়েত করেছ, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যাদেরকে নিরাপদ রেখেছ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত কর। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করো।  তুমি আমাদেরকে যা দিয়েছ তাতে বরকত দাও। তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছ তা হতে আমাদেরকে রক্ষা করো। নিশ্চয় তুমিই ফয়সালা করো; তোমার ওপরে ফয়সালা করার কেউ নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, সে কোনও দিন অপমানিত হবে না এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছ, সে কখনো সম্মানিত হতে পাবে না। হে আমাদের রব, তুমি বরকতময় ও সুমহান। তোমার পাকড়াও থেকে বাঁচার উপায় নাই তোমার আশ্রয় ছাড়া।”


দুআ: ৯ (হেদায়েত লাভের পর অন্তরের বক্রতা হতে মুক্তি চাওয়ার দুআ)

‎رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণ: রব্বানা-লা-তুযিগ্ কুলূবানা- বা’দা ইয্ হাদাইতানা-অহাবলানা-মিল্ লাদুনকা রহমাহ , ইন্নাকা আন্তাল্ ওয়াহহা-ব।

অর্থ: “হে আমাদের রব, আপনি হিদায়েত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন।”


দুআ: ১০ (হেদয়েত পাওয়ার পর তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার দুআ)

اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ

উচ্চারণ: “ইয়া মুসাররিফাল কুলুব সাররিফ কুলুবানা আলা ত্ব-আতিক।”

অর্থ: “হে হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী, আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন।”

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِى عَلَى دِينِكَ

উচ্চারণ: ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কলবি আ’লা দীনিক।

অর্থ: “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও।” 


আল্লাহর নিকট হতে সু সন্তান লাভের দোয়া


দোয়া-১-

رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ

রব্বি লা-তার্যানী র্ফাদাঁও অআন্তা খাইরুল্ ওয়ারিছীন্। অর্থাৎ হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস।

[ সুরা আম্বিয়া ২১:৮৯ ]


দোয়া ২-

رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাতান, ইন্নাকা সামিউ’দ দুআ’ই (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ৩৮)

অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা কবুলকারী।


দোয়া ৩-

﴿رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ﴾

রব্বি হাব্লি মিনাস সলেহিন অর্থাৎ হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দাও৷” (সুরা সফফাত ১০০)


দোয়া ৪-

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

রব্বানা-হাবলানা-মিন্ আয্ওয়া-জ্বিনা-অ র্যুরিয়্যা-তিনা-কুররতা আ’ইয়ুনিঁও অজ্ব্’আল্না-লিল্মুত্তাকীনা ইমা-মা

অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর করো এবং আমাদেরকে সংযমীদের আদর্শস্বরূপ করো।” (সুরা ফুরকান:৭৪)


আমরা সন্তান-সন্তুতি কামনায় দুনিয়ার কোনো মানুষের কাছে সন্তান কামনা করব না। কোনো অবৈধ ও অনৈসলামিক উপায় অবলম্বন না করে আল্লাহ ওপর ভরসা করে উক্ত দোআ’টি নিয়মিত পাঠ করি। আল্লাহ আমাদের নেক সন্তান দান করবেন।


এর পাশাপাশি আমাদের যা করণীয়—

* আমাদের যাদের সন্তান নেই, তাদের সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ চাইলে যেকোনো বয়সে সন্তান দিতে পারেন।

* শুধু সন্তান চাইলেই হবে না, আল্লাহর কাছে নেকসন্তান কামনা করতে হবে।

* সন্তান পাওয়ার আশায় কোনো মাজার, কবর, ফকির-দরবেশ, তাবিজ গ্রহণ কিংবা বদকারের কাছে যাওয়া যাবে না এবং অবৈধ উপায় গ্রহণ করা যাবে না।

* আল্লাহ সন্তান দান করলে শোকরিয়া আদায় করে সুন্দর নাম রাখতে হবে।

* সন্তানকে দ্বীন-ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে।

আর সন্তানকে সকলেই প্রথম যে উপহারটা দেই যা তার সার জীবনের সঙ্গী হয় সেটা সুন্দর দেখে দিতে হবে। আর সেই প্রথম উপহার টা হচ্ছে একটা সুন্দর নাম।